Posts

Showing posts from May, 2025

কাঠ মানির কাব্য

  🕰️'  সময় সেবার' আড়ালে কাঠ মানির কাব্য..... ১. শ্রাবণের এক ভেজা বিকেল। বাঁকুড়া জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম - রাণীবাঁধ। কাঁচা রাস্তা, কাদামাখা পথ, মাটির বাড়ি আর সেই পুরনো বটগাছটা — যেটার ছায়ায় বসেই পঞ্চায়েত সদস্য সুধাংশুবাবু আজকাল 'সময় সেবা কেন্দ্র' চালান। তার পাশে বাঁশের মাচায় বসে দুধে-চা বানাচ্ছেন লীলাবউ। দু’পাশে ছেলেমেয়েরা বসে অঙ্ক কষছে। সময় সেবা কেন্দ্র মানে স্থানীয় যুব দলের একটি ‘সামাজিক উদ্যোগ’, যেখানে ‘জনসেবা’ নাম করে চায়ের আড্ডা, ডোনেশনের গল্প আর কখনো-কখনো কিছু রাজনৈতিক ছক কষা হয়। সুধাংশুবাবু সদ্যই জেলার শাসকদলের ব্লক কো-অর্ডিনেটর হয়েছেন। তিনি জনগণের সেবা করতে চান — অন্তত বলার সময় সেটাই বলেন। কিন্তু তার ‘সেবার’ পেছনে আছে অন্য গল্প। ২. দু’মাস আগেই গ্রামে এসেছিল এক NGO — ‘নবজাগরণ’। তারা বলেছিল, শিক্ষার জন্যে বিনামূল্যে ট্যাব দেওয়া হবে গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের। চুক্তি অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সেবা কেন্দ্রই সেই ট্যাব বিলি করবে। সেইখানেই শুরু কারসাজি। ২৫০টি ট্যাব আসার কথা ছিল — এল মাত্র ১৭৫টি। বাকি ৭৫টি বাজারে বেচে দিল সুধাংশুবাবুর দল। প্রতি ট্য...

অভিশপ্ত মানবতা

  গল্পের নাম: “অভিশপ্ত মানবতা” বর্ষাকাল। পশ্চিম মেদিনীপুরের আকাশ যেন দিনের পর দিন কাঁদছে। মেঘে ঢাকা রাত, টিপটিপ বৃষ্টি। গড়বেতার বাজার থেকে ব্যবসায়ী অরিন্দম ঘোষ তাঁর দিনের শেষ লেনদেন সেরে একটা পুরোনো হাতব্যাগে দু’লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে ফিরছিলেন চন্দ্রকোনার দিকে। তাঁর মাথায় শুধু হিসেব আর আগামীকালের অর্ডারের চিন্তা। রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। সারসার পোলের কাছে এসে অরিন্দমের বাইক আচমকাই ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা—লম্বা চুল, লাল শাড়ি, বৃষ্টিতে ভেজা মুখ যেন জোনাকির আলোয় ঝলমল করছে। “দাদা, একটু উঠিয়ে দিন… আমার গন্তব্য খুব কাছে… বৃষ্টি-আঁধারে কোনো গাড়ি থামছেই না।” অরিন্দম দ্বিধায় পড়লেও, কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত আকর্ষণ। তিনি হালকা হেসে বললেন, “চলেন, চেপে বসুন।” কিন্তু বাইক চালাতে চালাতে হঠাৎই অরিন্দমের চেতনা ভোঁতা হতে থাকে। চারদিক ঝাপসা। ঘোরের মধ্যে মনে হয়, তিনি কোনও অন্ধকার ঘরে পড়ে আছেন। সামনে সেই নারী—তবে এবার তিনি একেবারে অন্যরূপে। মুখে রহস্যময় হাসি। চোখে যেন হাজার বছরের গ্লানি, কিন্তু তাতে লুকিয়ে আছে এক অভিশপ্ত মোহ। “তোমার টাকা আমি নিয়...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৭

ছায়া শহর – পর্ব ৭: শেষ ছায়া গুহা কাঁপছে। দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসছে ছায়ারা—নীরব, কিন্তু তীব্র উপস্থিতি নিয়ে। অসীম বুঝে যায়, এবার তার সামনে দাঁড়াতে হবে সেই একমাত্র সত্যের সামনে—শেষ ছায়া। গুহার ভেতর বাতি নিভে যায়, শুধু এক বিন্দু আলোয় ধরা পড়ে এক অবয়ব। কালো, আবছা, ধোঁয়ায় মোড়ানো। সেই ছায়া কথা বলে না, কিন্তু অসীমের মনে কেবল একটাই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে— “আমি কে?” তখনই ছায়াটা ধীরে ধীরে আকার নিতে থাকে। প্রথমে মুখ, তারপর চোখ, তারপর শরীর... এবং অবশেষে অসীম দেখে— সে নিজেই নিজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটি প্রতিচ্ছবি। যেন সে নিজের ছায়ার রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। ছায়া-অসীম বলে, "তুই এখানে এসেছিস সত্য খুঁজতে। কিন্তু সত্য কখনো বাইরের জগতে থাকে না। তুই কোমায় আছিস, কিন্তু তোর মস্তিষ্ক এখন তোরই তৈরি এক ছায়া শহরে আটকে পড়েছে।" "এখান থেকে ফিরে যেতে হলে তোর সত্যকে গ্রহণ করতে হবে—সুবোধ আর নেই। সে তোর চোখের সামনে মারা গিয়েছিল। তুই ভুলে যেতে চেয়েছিলি, তাই এই শহর বানিয়েছিলি।" অসীমের মনে পড়ে—এক দুর্ঘটনা। একটা ধ্বংসস্তূপের নিচে সে আর সুবোধ আটকে গিয়েছিল। সুবোধ তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৬

ছায়া শহর – পর্ব ৬: স্মৃতির দরজা গুহার নিঃশব্দতা যেন চিৎকারের চেয়েও ভারী। অসীম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সুবোধের ছবির দিকে—কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেখানে তার নিজের ছবি নেই। সে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করে, “আমার ছবি কোথায়? আমি কি ভুলে যাচ্ছি, আমি কে?” বৃদ্ধ একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে বলল, “তুই সেই পথিক, যে ছায়ার সাথে চুক্তি করেছিল নিজের অজান্তে। তুই এখানে এসেছিস শুধু সুবোধের জন্য না, নিজের হারানো স্মৃতি খুঁজতেও।” হঠাৎ গুহার ভেতর আলো ঝলকে ওঠে। দেয়ালের পেছনে একটা গোপন কুঠুরি খুলে যায়। ভেতরে রাখা একটি আয়না—পুরনো, ধুলোপড়া, কিন্তু রহস্যময়। বৃদ্ধ বলে, “এই আয়নাই ‘স্মৃতির দরজা’। এতে যা দেখবি, তা বাস্তব না হলেও সত্য।” অসীম আয়নার সামনে দাঁড়ায়। প্রথমে কিছুই দেখা যায় না, তারপর ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে একটা দৃশ্য—সে নিজেকে দেখছে, এক হাসপাতালে, চোখ বন্ধ অবস্থায় শুয়ে আছে। তার চারপাশে ডাক্তাররা ব্যস্ত। একজন ডাক্তার বলছে, “পাঁচ দিন ধরে কোমায় আছে। মস্তিষ্কে আঘাত খুব গুরুতর।” অসীমের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সে কি এই পুরো সময়টা কোমায় ছিল? তবে ছায়া শহর, সুবোধের ডায়েরি, রিভার হাউজ—সবই কি কল্পনা? ঠিক তখনই আয়নার ভেতর ...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৫

ছায়া শহর – পর্ব ৫: নদীর নিচে রাত প্রায় শেষের দিকে। চর ভৈরবপুরের পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়িয়ে অসীম তাকিয়ে আছে নদীর দিকে—ভৈরব নদী। সুবোধের ডায়েরির সেই বাক্য বারবার কানে বাজছে— "নদীর নিচে যা আছে, তাই সত্য।" নদীর পাড়ে একটা ভাঙা ঘাট, আর ঘাটের পাশে পড়ে আছে পুরনো একটা নৌকা। অসীম কিছু না ভেবেই নেমে পড়ে নদীতে। পানি ঠান্ডা, যেন জমাট বরফ। তার হাতের টর্চ আলো ফেলতেই নদীর তলদেশে ধরা পড়ে একটা অদ্ভুত আকৃতি—মানুষের মুখ! কিন্তু পাথরে খোদাই করা, যেন এক পুরনো সভ্যতার চিহ্ন। অসীম নিচে ঝুঁকে দেখে—সেখানে একটা পাথরের দরজা। দরজায় সেই একই চিহ্ন: তিনটি চোখ। হঠাৎ নদীর ভিতরেই একটা ছায়া দেখা যায়। ছায়াটা এবার জলকণার মতো ঘুরছে চারপাশে। অসীমের দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে দরজাটাকে জোরে ধাক্কা দেয়, আর এক মুহূর্তে তা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে সে দেখে—একটি গুহার মতো জায়গা। দেয়ালে অসংখ্য চিত্র আঁকা: অন্ধকারে জন্ম নেওয়া ছায়া, যারা মানুষদের স্মৃতি খেয়ে বেঁচে থাকে। গুহার এক কোণে বসে আছে এক বৃদ্ধ, চুলদাড়ি জট পাকানো। চোখ খোলার আগেই সে বলে ওঠে, “তুই এসেছিস শেষ প্রশ্নের জবাব পেতে?” অসীম হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “আপনি কে?” ...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৪

ছায়া শহর – পর্ব ৪: রিভার হাউজ রাত ২টা। অসীম লণ্ঠন হাতে রওনা দেয় চর ভৈরবপুরের পশ্চিম প্রান্তের দিকে। অন্ধকার রাত, চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ, মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে নদীর ধারের জলের গর্জন। বৃদ্ধার দেওয়া পথনির্দেশ মেনে সে পৌঁছায় একটা পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে—রিভার হাউজ। বাড়িটা একসময় অভিজাত ছিল বোঝা যায়, কিন্তু এখন দরজাগুলো ভাঙা, দেয়ালে শ্যাওলা, জানালায় কাঁচ নেই। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—দেওয়ালে রক্তের দাগের মতো কিছু আঁকা: তিনটি চোখ। অসীম দরজার কাছে এগিয়ে যায়। ধাক্কা দিতে না দিতেই দরজাটা বিকট শব্দে খুলে যায়, যেন বাড়িটা তার জন্যই অপেক্ষা করছিল। বাড়ির ভিতরে একটা পুরনো ফটো অ্যালবাম পড়ে আছে। অসীম পাতা উল্টাতে উল্টাতে দেখে—একটি ছবি। ছবিতে চারজন মানুষ—তাদের মধ্যে একজন সুবোধ! কিন্তু অন্য তিনজনের মুখ ঘোলাটে, ধোঁয়ায় ঢাকা। হঠাৎই পেছন থেকে দরজাটা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যায়। অসীম আতঙ্কিত চোখে ঘরের কোণে তাকায়। সেখানেই দেখা যায় একটি ছায়া, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। সে আবার ফটো অ্যালবামের দিকে তাকায়—ছবিটা বদলে গেছে। এবার সে নিজেকে দেখছে সেই চারজনের মধ্যে! ছায়াটি ফিসফিস করে বলে ওঠে— “তুই আমাদের নাম জানিস না,...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৩

ছায়া শহর – পর্ব ৩: সুবোধের ডায়েরি বৃদ্ধার কথায় অসীম থমকে যায়। মনে পড়ে সুবোধের সেই হাসিমুখ, সেই সাহসী চোখের দৃষ্টি—যে সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি ছিল। বৃদ্ধা তাকে নিয়ে যায় বাড়ির পিছনের এক ছোট্ট ঘরে। সেখানে ধুলো জমে থাকা একটা পুরনো টেবিলের ড্রয়ার খুলে সে বের করে একটি চামড়ার বাঁধানো ডায়েরি। “এইটাই সুবোধের শেষ চিহ্ন,” বৃদ্ধা ফিসফিস করে বলে, “এখানে তার সব লেখা আছে… কিন্তু সাবধান, সব সত্য জানাও বিপজ্জনক।” অসীম ডায়েরির প্রথম পাতাটা খুলে দেখে—তারিখ: ১২ মার্চ। "আজ চর ভৈরবপুরে এসেছি। মনে হচ্ছে এই শহর যেন ধোঁয়ার মধ্যে ঢাকা। লোকজন চুপচাপ, কেউ কারো চোখে চোখ রাখে না। রাত হলে সবাই দরজা বন্ধ করে রাখে। কেউ বলে না, কিন্তু সবাই ভয় পায়। এবং আমি জানি, ভয়টা একেবারে অমূলক নয়।" অসীম দ্রুত পড়তে থাকে— "১৪ মার্চ: আজ রাতে প্রথম ছায়াটা দেখলাম। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, স্পষ্ট একটা অবয়ব, কিন্তু মুখহীন। ওর সামনে দাঁড়ানো একজন লোক ছিল, আর ঠিক এক মুহূর্তে সে যেন মাটি গিলে নিল তাকে। ক‍েউ চিৎকার করল না, কেউ দৌড়াল না—সবাই জানালার পর্দা টেনে দিল। এখানকার মানুষ ছায়াদের দেখে না, ক...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব 2

ছায়া শহর – পর্ব ২: ছায়ার মুখোমুখি অসীম ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল পুরনো বাড়িটার দিকে। দরজাটা আধখোলা, যেন কেউ তাকে অপেক্ষা করে রেখেছে। আশেপাশে পাতা খসখস করছে, বাতাসে মিশে আছে একটা পুরনো, ঘোলাটে গন্ধ। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই তার মনে হল—এই বাড়িতে সময় থেমে আছে। দেয়ালে ঝুলে আছে ছেঁড়া পর্দা, মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পুরনো খবরের কাগজ আর এক কোণায় পড়ে আছে একটি ভাঙা রেডিও। হঠাৎই রেডিওটা নিজের থেকে চলতে শুরু করল। "এই চর ভৈরবপুরে আসার আগে দু'বার ভাবুন। কিছু ছায়া ফিরে আসে না..." অসীম রেডিওটা হাতে নিতে না নিতেই সেটা আবার নিঃশব্দ হয়ে গেল। সে গলা শুকিয়ে আসা গলায় ডাকল, “কেউ আছেন?” উত্তর এল না। কিন্তু পেছন থেকে স্পষ্ট শব্দ—চোখের পাতা একবারের জন্যও বন্ধ করো না। সে ঘুরে তাকাতেই কাউকে দেখতে পেল না, কিন্তু শীতল একটা ছায়া যেন পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ জানালার পাশে চোখে পড়ল এক ঝলক কিছু। একটা মেয়ের মুখ, মুখটা অস্বাভাবিক সাদা আর চোখ দুটো যেন অন্ধকারে জ্বলছে। অসীম এগিয়ে গেল জানালার দিকে, কিন্তু পৌঁছানোর আগেই মেয়েটা মিলিয়ে গেল বাতাসে। এমন সময় দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধা ধীরে ধীরে বলল, “তুমি যদি স...

ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ১

 গল্পের নাম “ছায়া শহর” — এটি একটি থ্রিলার এবং রহস্যে মোড়ানো কাহিনি।  ছায়া শহর – পর্ব ১: আগমন রাত ৯টা। চন্দ্রকোনা শহরের ব্যস্ততা তখনো পুরোপুরি থামেনি। শহরের উত্তরের এক কোণে ছোট্ট একটা বাস স্ট্যান্ডে নামল অসীম। হাতে একটা পুরনো স্যুটকেস, চোখে ক্লান্তি আর মুখে অদ্ভুত রকমের আতঙ্ক। অসীম একজন সাংবাদিক। কিন্তু সে এখানে এসেছে ছদ্মবেশে, নিজের পরিচয় গোপন রেখে। এই শহরের কাছেই আছে একটা পুরোনো গ্রাম—চর ভৈরবপুর। সেখানেই সম্প্রতি ঘটেছে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা—মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে রাতের অন্ধকারে, কারও কোন খোঁজ মিলছে না। অসীমের এক সহকর্মী, সুবোধ, কয়েক মাস আগে এই রহস্য খতিয়ে দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। অসীম বিশ্বাস করে, এই শহর এবং তার আশপাশে কিছু একটা ভয়ানক চলছে। বাস স্ট্যান্ড থেকে সে একটা টোটো নিয়ে রওনা দেয় শহরের একমাত্র গেস্টহাউজের দিকে। রাস্তাঘাট শুনশান, বাতি জ্বলছে না অনেক জায়গায়। যেন শহরটা তাকে স্বাগত না জানিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। হঠাৎই গেস্টহাউজে পৌঁছনোর আগে এক অচেনা গলিতে টোটোওয়ালা বলে ওঠে— "ভাই, এই রাস্তা দিয়ে গেলে বিপদ হতে পারে। অনেকে বলে এখানে ছায়া দেখা যায়..." অসীম একটু থমকে গেলেও বলে, ...

ফেসবুকে ভিডিও আপলোডের পদ্ধতি

ধরলাম আপনি ভিডিও বানিয়ে ফেসবুক থেকে ইনকাম করতে চান — অর্থাৎ ফেসবুক পেজ খুলে ভিডিও আপলোড করে ইনকাম। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রসেসটা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছি: --- ফেসবুক ভিডিও বানিয়ে ইনকাম করার ধাপসমূহ   ধাপ ১: একটি ফেসবুক পেজ খুলুন নিজের নামে বা একটি ব্র্যান্ড নামে একটি Facebook Page খুলুন। Page category দিন যেমন: "Video Creator" বা "Entertainment", ইত্যাদি। ধাপ ২: নিয়মিত ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করুন ভিডিও হতে পারে: তথ্যবহুল (educational) বিনোদনমূলক (funny skits, storytelling) টিউটোরিয়াল (makeup, tech tips) রান্না বা ভ্রমণ ইত্যাদি ভিডিও হতে হবে নিজের তৈরি এবং কমপক্ষে ১ মিনিট দীর্ঘ।   ধাপ ৩: পেজে দর্শক বাড়ান ভিডিওগুলো ফেসবুকে শেয়ার করুন, বন্ধুদের ইনভাইট করুন। গ্রুপে শেয়ার করুন (কিন্তু স্প্যাম করবেন না)। ভালো ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। ধাপ ৪: ফেসবুক মনিটাইজেশন শর্ত পূরণ করুন আপনার পেজে ফেসবুক ইন-স্ট্রিম অ্যাডস (In-stream ads) চালু করতে হলে এই শর্তগুলো পূরণ করতে হবে: শর্ত বিস্তারিত ফলোয়ার কমপক্ষে ১০,০০০ ফলোয়ার ভিডিও দেখা সময় গত ৬০ দি...

ফেসবুক থেকে ইনকামের পথ

ফেসবুক থেকে ইনকাম করার অনেকগুলো উপায় আছে, তবে সঠিকভাবে কৌশল জানলে এবং নিয়ম মেনে চললে আপনি ভালো আয় করতে পারেন।   নিচে সহজ বাংলায় পরিষ্কারভাবে কিছু জনপ্রিয় উপায় তুলে ধরা হলো: ---  ১. ফেসবুক পেজ ও ভিডিও মনিটাইজেশন (Facebook In-stream Ads) আপনি যদি নিজের একটি ফেসবুক পেজে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেন এবং আপনার পেজ নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করে, তাহলে ফেসবুক আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখাবে — এখান থেকেই ইনকাম হবে। শর্তগুলো সাধারণত: পেজে ১০,০০০ ফলোয়ার থাকতে হবে। গত ৬০ দিনে কমপক্ষে ৬ লাখ মিনিট ভিডিও দেখা হতে হবে। ভিডিওগুলো মূলত আপনার নিজের তৈরি হওয়া চাই। ---   ২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) আপনি কোনো পণ্যের লিংক ফেসবুকে শেয়ার করে দিতে পারেন। কেউ যদি সেই লিংক থেকে পণ্য কিনে, তাহলে আপনি কমিশন পাবেন। যেমন: Daraz Affiliate Amazon Affiliate ClickBank ইত্যাদি ---   ৩. ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রি ফেসবুকের Marketplace অপশন ব্যবহার করে আপনি পণ্য কিনে বিক্রি করতে পারেন। বিশেষ করে পুরাতন জিনিসপত্র, হস্তশিল্প, কাপড়, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি। ...

ইউটিউব শেখার ৩০ দিনের রুটিন পদ্ধতি

নিচের এই ৩০ দিনের রুটিনটি ফলো করলে আপনি ৩০ দিনের মধ্যে বড় ইউটিউবার হতে পারবেন। --- দিন কাজের বিবরণ সহায়ক লিংক ১ম দিন গুগল অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন ভিডিও ২য় দিন ইউটিউব অ্যাপে লগইন ও নতুন চ্যানেল খুলুন ভিডিও ৩য় দিন চ্যানেলের নাম নির্ধারণ করুন আর্টিকেল ৪র্থ দিন প্রোফাইল ছবি ও ব্যানার সেট করুন ভিডিও ৫ম দিন চ্যানেল বর্ণনা (Description) দিন ভিডিও ৬-৭ম দিন নিশ/বিষয়বস্তু নির্ধারণ করুন আর্টিকেল ৮-৯ম দিন লোগো ও ইন্ট্রো ভিডিও তৈরি করুন ভিডিও ১০-১২তম দিন প্রথম ভিডিওর স্ক্রিপ্ট ও পরিকল্পনা ভিডিও ১৩-১৪তম দিন ভিডিও শুট করুন ভিডিও ১৫-১৬তম দিন ভিডিও এডিট ও থাম্বনেইল তৈরি ভিডিও ১৭তম দিন প্রথম ভিডিও আপলোড করুন ভিডিও ...

ইউটিউব ইনকাম বাংলায়

  মোবাইল দিয়ে ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য একটি পূর্ণ গাইডলাইন দিচ্ছি — ভিডিও তৈরির আইডিয়া, ভিডিও এডিটিং অ্যাপ, মনিটাইজেশন পদ্ধতি এবং কৌশলসহ । মোবাইল দিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার ধাপে ধাপে গাইড (বাংলায়) ধাপ ১: ইউটিউব চ্যানেল খোলা গুগল অ্যাকাউন্ট (Gmail) দিয়ে সহজেই ইউটিউব অ্যাপে চ্যানেল খুলে নিতে পারবেন। চ্যানেল খোলার পর আপনার “নিচের বিষয়ে” ফোকাস করা উচিত: ধাপ ২: কন্টেন্ট আইডিয়া (কাজের ভিডিওর থিম) টেক রিভিউ: মোবাইল/অ্যাপ রিভিউ শিক্ষামূলক ভিডিও: SSC, HSC, গণিত, ইংরেজি টিউটোরিয়াল: অনলাইন ইনকাম, ফ্রিল্যান্সিং ঘরোয়া রান্না/লাইফস্টাইল মজার ফ্যাক্টস বা শর্টস (shorts) ধাপ ৩: মোবাইল অ্যাপ দিয়ে ভিডিও তৈরি ও এডিটিং স্ক্রিপ্ট রাইটিং : Google Docs, Notepad ভিডিও রেকর্ডিং: মোবাইল ক্যামেরা বা AZ Screen Recorder ভিডিও এডিটিং অ্যাপ: KineMaster CapCut (ফ্রি এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি) InShot ধাপ ৪: থাম্বনেইল ডিজাইন (আকর্ষণীয় করার জন্য) অ্যাপ: Canva (Free), PixelLab মোবাইল দিয়েই 1280x720 px রেজোলিউশনে থাম্বনেইল বানানো সম্ভব ধাপ ৫: ভিডিও আপলোড এবং SEO ভিডিওর টা...

ক্ষীরপায়ের ঐতিহ্য সংস্কৃতি

 পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই শহর ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। শতাব্দীপ্রাচীন এই শহর আজও তার অতীত গৌরব, লোকসংস্কৃতি ও মিষ্টান্নের জন্য পরিচিত।  🏛️ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ১৮শ ও ১৯শ শতকে ক্ষীরপাই ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। তৎকালীন সময়ে এখানকার সূতা, তুলো ও হস্তশিল্প বিদেশে রপ্তানি হতো। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এখানে একটি কারখানা স্থাপন করেছিল, যা স্থানীয় তাঁতশিল্পকে সমৃদ্ধ করেছিল। তবে ১৯শ শতকে ব্রিটিশ পণ্য আমদানি ও কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার ফলে এই শিল্পের পতন ঘটে । 🏯 স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্য ক্ষীরপাই শহরে রয়েছে বহু প্রাচীন মন্দির, যা স্থাপত্য ও টেরাকোটার কাজের জন্য বিখ্যাত। মালপাড়ার রাধামাধব মন্দির (১৮১৭) একটি পঞ্চরত্ন মন্দির, যার টেরাকোটার কাজ কৃষ্ণলীলা, দশাবতার ও রাম-রাবণের যুদ্ধের দৃশ্য চিত্রিত করে । এছাড়াও, খারগেশ্বর শিব মন্দির (১৮৬১) ও উমাপতি শিব মন্দির শহরের ধর্মীয় ও স্থাপত্যিক ঐতিহ্যের অংশ।  🎭 সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্ষীরপাইয়ের সাংস্কৃতিক জীবন একসময় অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। কবিগান, তরজা, যাত্রা ও ন...

চন্দ্রকোনা

---      শিরোনাম: চন্দ্রকোনা: ইতিহাস, স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্যে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত চন্দ্রকোনা শহর একটি প্রাচীন জনপদ, যা ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর। এক সময়ে এটি একটি সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল, যা মন্দির, দুর্গ ও লোকসংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত ছিল। আজও এই শহর তার অতীত গৌরব ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ধরে রেখেছে। চন্দ্রকোনার প্রাচীন স্থাপত্য, লোকজ শিল্প ও উৎসবগুলো এই শহরের এক অনন্য পরিচয় তৈরি করেছে। --- ইতিহাস: রাজবংশের স্মৃতি ও যুদ্ধের চিহ্ন চন্দ্রকোনার ইতিহাস মূলত ১৬শ শতকে কেশরী রাজবংশ ও ভট্টাচার্য বংশের শাসনকাল থেকে সুপ্রসিদ্ধ। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই শহরের নামকরণ হয়েছে 'চন্দ্রকেতু' নামের এক পৌরাণিক চরিত্রের নামে, যদিও ইতিহাসবিদরা চন্দ্রকোনা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শিবসিংহ বা প্রতাপনারায়ণ রাজার নামকরণের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। এখানে অবস্থিত চন্দ্রকোনা রাজবাড়ি ছিল তৎকালীন রাজার প্রশাসনিক ও আবাসস্থল। যদিও বর্তমানে এটি ভগ্নপ্রায়, তবে এর ভিত ও টিকে থাকা অংশগুলি প্রমাণ করে এটি এক সময় কতটা বিস্ময়কর স্থাপত্য ছিল। এছাড়া চন্দ্রকোনা শহর একসময় ...

ছাত্র জীবন ও মোবাইল

--- ভারতবর্ষের ছাত্র জীবন ও মোবাইল: আশীর্বাদ না অভিশাপ?    ভারতবর্ষে শিক্ষাব্যবস্থা এক বিশাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর এই পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে মোবাইল ফোন। প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা ছাত্রজীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু এই পরিবর্তন কি কেবল আশীর্বাদ, নাকি এর সাথে লুকিয়ে রয়েছে কিছু অভিশাপও? মোবাইলের আশীর্বাদ ১. জ্ঞানার্জনের সহজ পথ: গুগল, ইউটিউব, অনলাইন কোর্স – এসব আজ হাতের মুঠোয়। যেকোনো বিষয়ে তথ্য পাওয়া এখন কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। মোবাইল ফোন শিক্ষাকে করেছে সহজ, গতিশীল ও ইন্টার‍্যাকটিভ। ২. অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষা অ্যাপ: কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অনলাইন শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে ব্যাপকভাবে। মোবাইলের মাধ্যমে Zoom, Google Meet ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ক্লাস করা আজ সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩. যোগাযোগের মাধ্যম: শিক্ষক, সহপাঠী ও অভিভাবকদের সাথে সহজ যোগাযোগে মোবাইল হয়েছে অপরিহার্য। এতে দলগত প্রকল্প, পড়াশোনার আলোচনা আরও কার্যকর হয়েছে। মোবাইলের অভিশাপ ১. বিনোদনে আসক্তি: সোশ্যাল মিডিয়া, গেমস, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ছাত্রদের মনোযোগ বিচ্যুত ...

বাংলার আম

  শিরোনাম:  বাংলার আম – সুমিষ্ট স্বাদে বিশ্বজয়   লেখক: সঞ্জয় পাল  প্রকাশিত: তারিখ -২৩ মে ২০২৫  গ্রীষ্ম এলেই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বাজারে ছড়িয়ে পড়ে এক মিষ্টি ঘ্রাণ – আমের ঘ্রাণ। শুধু ঘ্রাণেই নয়, স্বাদ, গুণাগুণ এবং বৈচিত্র্যে বাংলার আম আজ বিশ্বজয় করে চলেছে। বাংলার মাটিতে আমের রাজত্ব পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় আম চাষ হয়, তবে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা – এই জেলাগুলোর ভূমিকা অনন্য। এখানে চাষ হয় নানা স্বাদের, ঘ্রাণের এবং রঙের আম: হিমসাগর – আঁশহীন, ঘ্রাণে ভরপুর এবং রসে টইটম্বুর। রাজকীয় স্বাদের এই আম মূলত মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ার গর্ব। ল্যাংড়া – মালদহের প্রধান আম। হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। ফজলি – আকারে বড়, মাংসল ও রসাল। প্রায় ১ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। আম্রপালি – আধুনিক জাতের এই ছোট আকৃতির আম শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও রয়েছে: গোলাপখাস, কিষানভোগ, সুবর্ণরেখা, মল্লিকা – স্বাদে স্বতন্ত্র। দাম কত? আমের দাম মৌসুম ও গুণমান অনুযায়ী ওঠানামা করে। হিমসাগর ও ল্যাংড়া: প্রতি কেজি ৮০–১২০ টাকা (উচ্চমানের ক্ষেত্রে ১৫০ ...

নীরব শিশুর কান্না

--- গল্পের নাম: “নীরব শিশুর কান্না ”   ছোট্ট শহরের এক কোণায় ছিল রাহুল আর তৃষার ছোট সংসার। নতুন সংসার, সদ্যোজাত পুত্র সন্তান ‘রায়ান’কে নিয়ে যেন তাদের পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছিল। শুরুতে সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু কালের সাথে সাথে এক অদৃশ্য শত্রু তাদের সংসারে বাসা বাঁধলো—মোবাইল ফোন।   তৃষা সকাল থেকেই ব্যস্ত থাকত ইনস্টাগ্রামে রিল বানাতে, নিজের রান্না বা সাজের ছবি পোস্ট করতে। আর রাহুল, অফিসের কাজ শেষ করেই ডুবে যেত ফেসবুক আর ইউটিউবের অনন্ত স্ক্রলিং-এ। সন্তান রায়ান তখন এক কোণে বসে চুপচাপ খেলা করত, কখনো ছবি আঁকত, আবার কখনো চেয়ে থাকত মা-বাবার দিকে, একটু সময়ের জন্য। একদিন রায়ান খুব খুশি হয়ে তার আঁকা একটা ছবি নিয়ে গেল বাবার কাছে। ছবিটা ছিল তিনজনের—বাবা, মা আর সে। কিন্তু রাহুল তখন ব্যস্ত অফিসের ইমেইল নিয়ে, সে চোখ তো তুললই না, বরং বলল, “রায়ান, এখন না প্লিজ!” অভিমানে চুপ হয়ে গেল সে।  এরপর সে গেল মায়ের কাছে। মা তখন ইনস্টাগ্রামের লাইভে রান্নার ভিডিও করছিল। রায়ানের ডাকে বিরক্ত হয়ে বলল, “পরে বলো, এখন লাইভে আছি।” এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে রায়ান বুঝে গেল, মা-...

এক জীবনের যন্ত্রণা ও অনুপ্রেরণার কাহিনী

--- শিক্ষকের নাম বরুণ কুমার দাস:   এক জীবনের যন্ত্রণা ও অনুপ্রেরণার কাহিনি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ছোট্ট এক জনপদ, কাশিপুর। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন বরুণ কুমার দাস। একটি স্বচ্ছল ও শিক্ষিত পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা। পিতা ছিলেন এলাকার এক নামকরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর মাতা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার। পরিবারের শিক্ষাগত পরিবেশ এবং আদর্শে বড় হয়ে উঠেছিলেন বরুণ এবং তাঁর বড় ভাই। শৈশব থেকেই মেধাবী, পরিশ্রমী ও সাদাসিধে স্বভাবের ছিলেন তিনি। মাত্র ২২ বছর বয়সে, স্নাতক পাশ করার পর তিনি একজন স্কুল শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন একটি সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। নতুন চাকরি, নতুন স্বপ্ন, নতুন দায়িত্ব—সবকিছুই যেন এক নতুন রঙিন অধ্যায়ের সূচনা ছিল তাঁর জীবনে। কিন্তু সমস্যা ছিল স্কুলের দূরত্ব। স্কুলটি তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। প্রতিদিন যাতায়াত ছিল খুবই কষ্টকর। এই সময়েই তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী ছিলেন বুদ্ধিমতী ও সহানুভূতিশীল, তবে স্বামীকে প্রতিদিন এতটা দূরত্বে যাওয়া-আসা করতে দেখে তিনিও উদ্বিগ্ন ছিলেন। পরিবার, স্ত্রী, এবং বাবা-মার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষ...

ছায়া থেকে আলো

--- গল্পের নাম: ছায়া থেকে আলো   পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট শহর চন্দ্রকোনা। এখানেই জন্ম সুদীপের। সাধারণ পরিবারের ছেলে, ছোটবেলা থেকেই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে সে চাকরির খোঁজে ছুটেছিল কলকাতা পর্যন্ত, কিন্তু ভাগ্য তখনও সহায় ছিল না। একদিন অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে সুদীপ জানতে পারে "Treasure NFT" নামে একটি ট্রেডিং কোম্পানির কথা। এই কোম্পানি নাকি ডিজিটাল সম্পদের মাধ্যমে লোকজনকে ইনকাম করতে শেখায়। সুদীপ প্রথমে সন্দেহ করলেও সাহস করে ছোট একটা বিনিয়োগ করে। আশ্চর্যের বিষয়, অল্পদিনের মধ্যেই সে কিছু মুনাফা পেতে শুরু করে। তারপর সুদীপ তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে এই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে বলে। ধীরে ধীরে তার মাধ্যমে বহু মানুষ এই ট্রেডিংয়ে আগ্রহী হয় এবং তারা ইনকাম করতেও শুরু করে। সুদীপ হয়ে ওঠে এলাকার আলোচিত নাম। কিন্তু হঠাৎ একদিন Treasure NFT কোম্পানিটি অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। কেউ টাকা তুলতে পারছে না, লগইন করতে পারছে না। লোকজন সুদীপের উপর দোষ চাপাতে থাকে। "তুই তো বলেছিলি নিরাপদ", "আমার কষ্টের টাকা গেল",— এমন কত...

ইঁদুর আর চাষী ভাইয়ের গল্প

--- ইঁদুর আর চাষীভাইয়ের আশ্চর্য গল্প    একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করত গোপাল নামের এক চাষী। সে খুবই গরিব ছিল, কিন্তু মনটা ছিল অদ্ভুত রকমের ভালো। তার একটা পুরোনো কাঁচা বাড়ি ছিল, যেখানে সে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সাদামাটা জীবন যাপন করত। তবে তার বাড়িতে একটা অদ্ভুত সমস্যা ছিল— অসংখ্য ইঁদুর। ইঁদুরগুলো দিনে-রাতে তার ঘরের প্রতিটি কোণে দাপিয়ে বেড়াতো। ধান-চাল, আলু-পেঁয়াজ, এমনকি গৃহস্থালির জিনিসও কেটে নষ্ট করত। অন্য কেউ হলে অনেক আগেই বিষ বা ফাঁদ দিয়ে সেগুলো তাড়িয়ে দিত। কিন্তু গোপাল তা করত না। সে বলত, "ওরা তো ছোট প্রাণী, ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে। যতটুকু খায়, খাক না, আমরাও তো মানুষের মতো ভাগ করে খেতে শিখেছি।" স্ত্রী রমা মাঝে মাঝে রেগে যেত, বলত, "তুমি না পারো ইঁদুর তাড়াতে, না পারো ঠিকমতো সংসার চালাতে! একদিন এই ইঁদুরগুলোই আমাদের সর্বনাশ করবে!" কিন্তু গোপাল তার মনোভাব একটুও বদলাত না। সে বরং নিয়ম করে প্রতিদিন ইঁদুরদের জন্য চাল ছড়িয়ে দিত এক কোণে। আশেপাশের লোকেরা তাকে পাগল বলত। কেউ বলত, "ইঁদুরের সাথে আবার এত মায়া? তুমি না মানুষ, না দেবতা?" দিন কাটত...

জঙ্গলের বন্ধু

--- গল্পের নাম: জঙ্গলের বন্ধু    অনেক বছর আগের কথা। এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম ছিল আরনব। বয়স মাত্র আট। তার মা-বাবা এক পাহাড়ি ভ্রমণে গিয়েছিল এবং হঠাৎ এক ঝড়ের রাতে স্রোতে ভেসে গিয়ে সে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরদিন সে চোখ খুলে দেখে, সে এক অজানা গভীর জঙ্গলের মধ্যে পড়ে আছে। চারদিকে অজানা গাছ, নানা শব্দ আর এক ধরনের নিস্তব্ধ ভয়। প্রথমে সে কাঁদতে শুরু করল। না ছিল খাবার, না ছিল পানি, না কোনো মানুষ। হঠাৎ সে দেখতে পেল এক বানর গাছ থেকে তাকে দেখছে। বানরটা নিচে নেমে এল, হাতে কিছু পাকা কলা। আরনব ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। কিন্তু বানরটি তার সামনে কলাগুলো রেখে চলে গেল। ক্ষুধার্ত আরনব ধীরে ধীরে সেই কলা খেয়ে শক্তি ফিরে পেল। পরদিন সে আবার জঙ্গলে হাঁটতে থাকে। তখনই তার দেখা হয় এক বিশাল বুড়ো হাতি, নাম ছিল বাপন। হাতিটি তার শুঁড় দিয়ে আরনবকে মাথায় তুলে নেয়, তারপর এক নদীর ধারে নিয়ে যায়। আরনব পানি খায়, হাতিকে জড়িয়ে ধরে। যেন এক নতুন বন্ধুত্বের শুরু। দিন যত যেতে থাকে, আরনব তত জঙ্গলের প্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে থাকে—এক বুদ্ধিমান পেঁচা তাকে রাতের দিক চেনাতে শেখায়, এক হরিণ তাকে ঝোপের খাবার চিনিয়ে দে...

জুনের নরম বিকেল

--- গল্পঃ "জুনের নরম বিকেল"  জুন মাসের এক শান্ত বিকেল। আকাশে হালকা মেঘ, বাতাসে শীতল ছোঁয়া। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, নদীর ধারে নির্জন এক জায়গায় বসে আছে আরিয়ান আর তৃণা। তৃণা ঘাসের ওপর বসে পা ছুঁই ছুঁই করে নদীর জলে। তার চোখে একধরনের প্রশান্তি, মুখে মৃদু হাসি। পাশে বসে আছে আরিয়ান, কোলে গিটার। সে ধীরে ধীরে সুর তুলছে—হালকা এক রোমান্টিক সুর, যেন নদীর ঢেউয়ের সঙ্গেই মিলেমিশে যাচ্ছে। তৃণা হঠাৎ সুরের তালে গুনগুন করে গাইতে শুরু করে। কণ্ঠটা এত মধুর, এত স্বচ্ছ যে, চারপাশের পাখিরাও যেন থেমে যায় শুনতে। তারা দু’জনেই হারিয়ে যায় এক রঙিন মায়ায়, যেখানে কেবল সুর, ভালোবাসা আর দুজনের নিঃশব্দ অনুভব। হঠাৎ এক ঝলক হাওয়া এসে তৃণার চুল উড়িয়ে দেয়। চুল এসে মুখ ঢেকে ফেলে, আরিয়ান হাসে—চোখে এক অদ্ভুত মুগ্ধতা। সে গিটার থামিয়ে বলে, — “তুমি ছাড়া এই গান অপূর্ণ লাগে।” তৃণা একটু লাজুক হাসে, চোখে জল টলমল করে ওঠে—আনন্দের, ভালোবাসার। সে শুধু বলে, — “আর এই বিকেলগুলো, এভাবেই কেটে যাক চুপচাপ, তোমার গানের সুরে, আমার গানের কথায়।” সূর্য ধীরে ধীরে নদীর ওপারে নেমে যাচ্ছে। আলো মাখানো বিকেলটা সাক্ষী হয...

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা

গল্প: "ডিএর আশায়... " সালটা ১৯৮৫। চন্দ্রকোনার এক ছোট্ট গ্রামে, নাম তার খোকন স্যার। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীরা তাকে ভালোবেসে “খোকন মাস্টার” বলে ডাকত। জীবন কেটেছে অল্পে-সরলতায়, নিখুঁতভাবে ক্লাস নেওয়া, প্রতিদিন স্কুলের ঘণ্টা বাজানোর আগে স্কুলে পৌঁছানো, আর ছুটির পরে ছাত্রদের নিয়ে গল্প করে সময় কাটানো—এই ছিল তার নিয়মিত রুটিন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু পাল্টে গেল। সরকারি ঘোষণা এল—শিক্ষকদের জন্য ডিএ (ডিয়ারনেস এলাউন্স) দেওয়া হবে, যাতে তারা বাজারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। খোকন স্যার শুনে খুশি হলেন। মন বলল, “অবসর নেওয়ার আগে যদি এই টাকাটা পাই, কিছু টাকা জমিয়ে একটা ঘর বানাব, আর নাতিদের জন্য ছোট একটা খাতা-পেন্সিলের দোকান দিব।” বছর গেল, ডিএর ঘোষণা এল, কিন্তু বাস্তবায়ন হলো না। একেকবার ফাইল গেল সদর দফতরে, ফিরল নীরবে। সহকর্মীরা বলল, “স্যার, এই তো হলো বলে, আর মাস দুয়েক!” খোকন স্যারও আশায় বুক বাঁধলেন, হিসেব করলেন কাগজে—“এই টাকাটা এলে আমি একটা সাইকেল কিনব, এতদিন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।” সময় চলে গেল। ২০০৫ সালে অবসর নিলেন। শেষ ক্লাসে ...