ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৪



ছায়া শহর – পর্ব ৪: রিভার হাউজ


রাত ২টা। অসীম লণ্ঠন হাতে রওনা দেয় চর ভৈরবপুরের পশ্চিম প্রান্তের দিকে। অন্ধকার রাত, চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ, মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে নদীর ধারের জলের গর্জন।


বৃদ্ধার দেওয়া পথনির্দেশ মেনে সে পৌঁছায় একটা পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে—রিভার হাউজ। বাড়িটা একসময় অভিজাত ছিল বোঝা যায়, কিন্তু এখন দরজাগুলো ভাঙা, দেয়ালে শ্যাওলা, জানালায় কাঁচ নেই। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়—দেওয়ালে রক্তের দাগের মতো কিছু আঁকা: তিনটি চোখ।


অসীম দরজার কাছে এগিয়ে যায়। ধাক্কা দিতে না দিতেই দরজাটা বিকট শব্দে খুলে যায়, যেন বাড়িটা তার জন্যই অপেক্ষা করছিল।


বাড়ির ভিতরে একটা পুরনো ফটো অ্যালবাম পড়ে আছে। অসীম পাতা উল্টাতে উল্টাতে দেখে—একটি ছবি। ছবিতে চারজন মানুষ—তাদের মধ্যে একজন সুবোধ!


কিন্তু অন্য তিনজনের মুখ ঘোলাটে, ধোঁয়ায় ঢাকা।


হঠাৎই পেছন থেকে দরজাটা নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যায়।


অসীম আতঙ্কিত চোখে ঘরের কোণে তাকায়। সেখানেই দেখা যায় একটি ছায়া, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। সে আবার ফটো অ্যালবামের দিকে তাকায়—ছবিটা বদলে গেছে। এবার সে নিজেকে দেখছে সেই চারজনের মধ্যে!


ছায়াটি ফিসফিস করে বলে ওঠে—

“তুই আমাদের নাম জানিস না, তাও এসেছিস। এখন তুই আমাদের অংশ।”


অসীম পেছনে দৌড়াতে চায়, কিন্তু তার পা যেন আটকে গেছে মাটিতে। ছায়াটা এক পা এক পা করে কাছে আসে, আর চারপাশের বাতাস জমে বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়।


ঠিক তখনই, তার পকেট থেকে সুবোধের ডায়েরি নিজে নিজে খসে পড়ে মাটিতে, আর খোলা পাতার শব্দে ছায়াটা থেমে যায়।


অসীম লক্ষ করে, ডায়েরির পাতায় নতুন করে লেখা হয়েছে কিছু:

"শেষ দেখো না, শুরু খোঁজো। নদীর নিচে যা আছে, তাই সত্য।"



---

চলবে.....

পরবর্তী পর্বে অসীম ডুব দেবে নদীতে, সেখানে লুকিয়ে আছে সেই শতবর্ষ পুরানো অভিশাপ-আর এক ভয়ঙ্কর সত্য যা বদলে দেবে সবকিছু। 





*নয়ন তারা*




Comments

Popular posts from this blog

প্রাক্তন স্যারের শ্রেণিকক্ষ

ছায়া থেকে আলো

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা