ইঁদুর আর চাষী ভাইয়ের গল্প
---
ইঁদুর আর চাষীভাইয়ের আশ্চর্য গল্প
একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করত গোপাল নামের এক চাষী। সে খুবই গরিব ছিল, কিন্তু মনটা ছিল অদ্ভুত রকমের ভালো। তার একটা পুরোনো কাঁচা বাড়ি ছিল, যেখানে সে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে সাদামাটা জীবন যাপন করত। তবে তার বাড়িতে একটা অদ্ভুত সমস্যা ছিল— অসংখ্য ইঁদুর।
ইঁদুরগুলো দিনে-রাতে তার ঘরের প্রতিটি কোণে দাপিয়ে বেড়াতো। ধান-চাল, আলু-পেঁয়াজ, এমনকি গৃহস্থালির জিনিসও কেটে নষ্ট করত। অন্য কেউ হলে অনেক আগেই বিষ বা ফাঁদ দিয়ে সেগুলো তাড়িয়ে দিত। কিন্তু গোপাল তা করত না। সে বলত,
"ওরা তো ছোট প্রাণী, ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে। যতটুকু খায়, খাক না, আমরাও তো মানুষের মতো ভাগ করে খেতে শিখেছি।"
স্ত্রী রমা মাঝে মাঝে রেগে যেত, বলত,
"তুমি না পারো ইঁদুর তাড়াতে, না পারো ঠিকমতো সংসার চালাতে! একদিন এই ইঁদুরগুলোই আমাদের সর্বনাশ করবে!"
কিন্তু গোপাল তার মনোভাব একটুও বদলাত না। সে বরং নিয়ম করে প্রতিদিন ইঁদুরদের জন্য চাল ছড়িয়ে দিত এক কোণে। আশেপাশের লোকেরা তাকে পাগল বলত। কেউ বলত,
"ইঁদুরের সাথে আবার এত মায়া? তুমি না মানুষ, না দেবতা?"
দিন কাটতে লাগল। হঠাৎ একদিন গভীর রাতে গোপালের স্বপ্নে একজন উজ্জ্বল আভামণ্ডিত সন্ন্যাসী দেখা দিলেন। তিনি বললেন,
"গোপাল, তোর দয়ার কারণেই আমি আজ তোকে আশীর্বাদ দিতে এসেছি। আমি নিজে গণেশ। তোর ঘরে যেসব ইঁদুর আছে, ওরা ছিল আমার বাহন। আমি তোকে পরীক্ষা নিচ্ছিলাম, আর তুই উত্তীর্ণ হয়েছিস। কাল সকালে উঠেই তোর ঘরের পেছনে যে গর্তটা আছে, ওখানে খোঁড়।"
গোপাল ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীর কাছে সব বলল। রমা প্রথমে হাসতে লাগল,
"বাহ! এখন স্বপ্নেও ইঁদুর কথা বলছে!"
তবুও গোপাল সে গর্তে খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নিল। হঠাৎ কোদাল দিতেই একটা বড়ো লোহার সিন্দুক বের হলো। খুলে দেখা গেল— ভর্তি সোনা, রূপো আর মূল্যবান রত্ন!
লোকজন ছুটে এল, সবাই অবাক। গোপালের ভাগ্য বদলে গেল এক ঝটকায়।
কিন্তু গোপাল আগের মতোই বিনয়ী রইল। সে নিজের টাকা দিয়ে গ্রামের স্কুল, মন্দির ও দুঃস্থদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করল। এবং হ্যাঁ, সে এখনো তার ঘরে ইঁদুরদের জন্য একটু চাল রেখে দেয়— এই বিশ্বাসে যে,
"দয়া কখনো বৃথা যায় না। যাকে তুমি তুচ্ছ ভাবো, তার মাধ্যমেই আশীর্বাদ আসতে পারে।"
---
শিক্ষা:
এই গল্প আমাদের শেখায়, দয়া, সহানুভূতি আর বিশ্বাস – এগুলো মানুষকে সত্যিকারের ধনী করে তোলে।
---
*নয়ন তারা*
Comments
Post a Comment