নীরব শিশুর কান্না

--- গল্পের নাম: “নীরব শিশুর কান্না ” 



 ছোট্ট শহরের এক কোণায় ছিল রাহুল আর তৃষার ছোট সংসার। নতুন সংসার, সদ্যোজাত পুত্র সন্তান ‘রায়ান’কে নিয়ে যেন তাদের পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছিল। শুরুতে সবই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু কালের সাথে সাথে এক অদৃশ্য শত্রু তাদের সংসারে বাসা বাঁধলো—মোবাইল ফোন। 
 তৃষা সকাল থেকেই ব্যস্ত থাকত ইনস্টাগ্রামে রিল বানাতে, নিজের রান্না বা সাজের ছবি পোস্ট করতে। আর রাহুল, অফিসের কাজ শেষ করেই ডুবে যেত ফেসবুক আর ইউটিউবের অনন্ত স্ক্রলিং-এ। সন্তান রায়ান তখন এক কোণে বসে চুপচাপ খেলা করত, কখনো ছবি আঁকত, আবার কখনো চেয়ে থাকত মা-বাবার দিকে, একটু সময়ের জন্য। একদিন রায়ান খুব খুশি হয়ে তার আঁকা একটা ছবি নিয়ে গেল বাবার কাছে। ছবিটা ছিল তিনজনের—বাবা, মা আর সে। কিন্তু রাহুল তখন ব্যস্ত অফিসের ইমেইল নিয়ে, সে চোখ তো তুললই না, বরং বলল, “রায়ান, এখন না প্লিজ!” অভিমানে চুপ হয়ে গেল সে। 
এরপর সে গেল মায়ের কাছে। মা তখন ইনস্টাগ্রামের লাইভে রান্নার ভিডিও করছিল। রায়ানের ডাকে বিরক্ত হয়ে বলল, “পরে বলো, এখন লাইভে আছি।” এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে রায়ান বুঝে গেল, মা-বাবার কাছে সে মুখে মুখে ভালোবাসা হলেও, বাস্তবে তারা ভালোবাসে মোবাইলকে। স্কুলে শিক্ষিকা যখন বলল, “আমার প্রিয় মানুষ” নিয়ে একটি রচনা লিখতে, রায়ান খালি কাগজ জমা দিল। কারণ তার প্রিয় কেউ ছিল না—কেউ তো সময়ই দেয়নি তাকে। সময় গড়াতে লাগল। বয়স বাড়লেও মনের মধ্যে এক বিষণ্নতা গেঁথে গেল তার। সে আর কারো সাথে মিশত না, কথা বলত না। মনোবিদরা বললেন, এটি "ইমোশনাল নেগলেক্ট"। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। মস্তিষ্কের একাংশ কাজ করত না ঠিকভাবে, কারণ ভালোবাসা না পেলে শিশুরা বেড়ে ওঠে না সম্পূর্ণভাবে।
 একদিন রাতে হঠাৎই রায়ান নিখোঁজ হয়ে গেল। খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেল, সে পাশের মাঠে বসে কাঁদছে একা। পাশে ছিল একটা চিঠি— “আমি শুধু একটু সময় চেয়েছিলাম, শুধু একটুখানি খেয়াল…” তৃষা আর রাহুল তখন বুঝল কী অপরাধ তারা করেছে। কিন্তু তখন দুঃখে কান্না করলেও সময় আর ফিরে আসে না। --- গল্পের উপসংহার: শিশুরা আমাদের সময় ও ভালোবাসা চায়, প্রযুক্তি নয়। মোবাইল ফোনে আসক্তি আমাদেরকে কাছের মানুষ থেকে দূরে করে দেয়। আজ যদি আমরা না বদলাই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু নিঃশব্দ কান্না দিয়ে গড়ে উঠবে, যেখানে থাকবে না হৃদয়ের উষ্ণতা। - 






*নয়ন তারা*

Comments

Popular posts from this blog

প্রাক্তন স্যারের শ্রেণিকক্ষ

ছায়া থেকে আলো

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা