ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৭
ছায়া শহর – পর্ব ৭: শেষ ছায়া
গুহা কাঁপছে। দেয়াল থেকে বেরিয়ে আসছে ছায়ারা—নীরব, কিন্তু তীব্র উপস্থিতি নিয়ে। অসীম বুঝে যায়, এবার তার সামনে দাঁড়াতে হবে সেই একমাত্র সত্যের সামনে—শেষ ছায়া।
গুহার ভেতর বাতি নিভে যায়, শুধু এক বিন্দু আলোয় ধরা পড়ে এক অবয়ব। কালো, আবছা, ধোঁয়ায় মোড়ানো। সেই ছায়া কথা বলে না, কিন্তু অসীমের মনে কেবল একটাই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে—
“আমি কে?”
তখনই ছায়াটা ধীরে ধীরে আকার নিতে থাকে। প্রথমে মুখ, তারপর চোখ, তারপর শরীর... এবং অবশেষে অসীম দেখে—
সে নিজেই নিজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
একটি প্রতিচ্ছবি। যেন সে নিজের ছায়ার রূপে রূপান্তরিত হয়েছে।
ছায়া-অসীম বলে,
"তুই এখানে এসেছিস সত্য খুঁজতে। কিন্তু সত্য কখনো বাইরের জগতে থাকে না। তুই কোমায় আছিস, কিন্তু তোর মস্তিষ্ক এখন তোরই তৈরি এক ছায়া শহরে আটকে পড়েছে।"
"এখান থেকে ফিরে যেতে হলে তোর সত্যকে গ্রহণ করতে হবে—সুবোধ আর নেই। সে তোর চোখের সামনে মারা গিয়েছিল। তুই ভুলে যেতে চেয়েছিলি, তাই এই শহর বানিয়েছিলি।"
অসীমের মনে পড়ে—এক দুর্ঘটনা। একটা ধ্বংসস্তূপের নিচে সে আর সুবোধ আটকে গিয়েছিল। সুবোধ তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে।
স্মৃতির ঢেউ আছড়ে পড়ে তার মস্তিষ্কে। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়। ছায়া-অসীম ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে।
তখন বৃদ্ধের কণ্ঠ শোনা যায়,
"স্মৃতি বেদনা দেয়, কিন্তু মেনে নিলেই মুক্তি দেয়। এখন তুই সিদ্ধান্ত নে—থাকবি ছায়া শহরে, না ফিরবি আলোতে।"
অসীম চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নেয়।
…
হাসপাতালের মনিটরে একটানা শব্দ থেমে গিয়ে দেখা যায় একটুখানি কম্পন।
অসীম চোখ খুলে—তার চারপাশে সাদা আলো, চিকিৎসকেরা বিস্ময়ে তাকিয়ে।
একজন ডাক্তার বলে,
“সে ফিরে এসেছে।”
…
শেষ দৃশ্য:
অসীম হাসপাতালের জানালার বাইরে তাকায়। ভৈরবপুরের ছায়াঘেরা স্মৃতি আর ফিরবে না, কিন্তু তার হৃদয়ে রয়ে যাবে একটাই সত্য—
যে সত্যকে মুখোমুখি করার সাহসই মানুষকে মুক্ত করে।
ধন্যবাদ
*নয়ন তারা*
Comments
Post a Comment