ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৬



ছায়া শহর – পর্ব ৬: স্মৃতির দরজা


গুহার নিঃশব্দতা যেন চিৎকারের চেয়েও ভারী। অসীম স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে সুবোধের ছবির দিকে—কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেখানে তার নিজের ছবি নেই।

সে ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করে, “আমার ছবি কোথায়? আমি কি ভুলে যাচ্ছি, আমি কে?”


বৃদ্ধ একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে বলল, “তুই সেই পথিক, যে ছায়ার সাথে চুক্তি করেছিল নিজের অজান্তে। তুই এখানে এসেছিস শুধু সুবোধের জন্য না, নিজের হারানো স্মৃতি খুঁজতেও।”


হঠাৎ গুহার ভেতর আলো ঝলকে ওঠে। দেয়ালের পেছনে একটা গোপন কুঠুরি খুলে যায়। ভেতরে রাখা একটি আয়না—পুরনো, ধুলোপড়া, কিন্তু রহস্যময়।


বৃদ্ধ বলে, “এই আয়নাই ‘স্মৃতির দরজা’। এতে যা দেখবি, তা বাস্তব না হলেও সত্য।”


অসীম আয়নার সামনে দাঁড়ায়।


প্রথমে কিছুই দেখা যায় না, তারপর ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে একটা দৃশ্য—সে নিজেকে দেখছে, এক হাসপাতালে, চোখ বন্ধ অবস্থায় শুয়ে আছে। তার চারপাশে ডাক্তাররা ব্যস্ত। একজন ডাক্তার বলছে, “পাঁচ দিন ধরে কোমায় আছে। মস্তিষ্কে আঘাত খুব গুরুতর।”


অসীমের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।


সে কি এই পুরো সময়টা কোমায় ছিল? তবে ছায়া শহর, সুবোধের ডায়েরি, রিভার হাউজ—সবই কি কল্পনা?


ঠিক তখনই আয়নার ভেতর থেকে ভেসে আসে একটি কণ্ঠস্বর, একেবারে সুবোধের গলা—

"তুই যদি মনে করিস সবটা স্বপ্ন, তাহলে জেগে উঠ। কিন্তু যদি সত্যি জানতে চাস—তাহলে শেষ ছায়ার মুখোমুখি হ।"


গুহা কাঁপতে শুরু করে। দেয়ালের চিত্রগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। ছায়ারা বেরিয়ে আসছে—তাদের চোখ নেই, কিন্তু তাদের অন্ধকার তাকিয়ে আছে অসীমের হৃদয়ের ভিতরে।


বৃদ্ধ চিৎকার করে বলে, “তোর সময় ফুরিয়ে আসছে! একবার চোখ বন্ধ করলে আর ফিরতে পারবি না!”



---


চলবে…


পরবর্তী পর্বে: অসীমের সেই চূড়ান্ত ছায়ার মুখোমুখি হবে—যে জানে সব স্মৃতি, সব মিথ্যে, আর সব সত্য। কিন্তু সে কি ফিরে আসতে পারবে?



---


 *নয়ন তারা*

Comments

Popular posts from this blog

প্রাক্তন স্যারের শ্রেণিকক্ষ

ছায়া থেকে আলো

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা