ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৫
ছায়া শহর – পর্ব ৫: নদীর নিচে
রাত প্রায় শেষের দিকে। চর ভৈরবপুরের পশ্চিম প্রান্তে দাঁড়িয়ে অসীম তাকিয়ে আছে নদীর দিকে—ভৈরব নদী। সুবোধের ডায়েরির সেই বাক্য বারবার কানে বাজছে—
"নদীর নিচে যা আছে, তাই সত্য।"
নদীর পাড়ে একটা ভাঙা ঘাট, আর ঘাটের পাশে পড়ে আছে পুরনো একটা নৌকা। অসীম কিছু না ভেবেই নেমে পড়ে নদীতে। পানি ঠান্ডা, যেন জমাট বরফ। তার হাতের টর্চ আলো ফেলতেই নদীর তলদেশে ধরা পড়ে একটা অদ্ভুত আকৃতি—মানুষের মুখ! কিন্তু পাথরে খোদাই করা, যেন এক পুরনো সভ্যতার চিহ্ন।
অসীম নিচে ঝুঁকে দেখে—সেখানে একটা পাথরের দরজা। দরজায় সেই একই চিহ্ন: তিনটি চোখ।
হঠাৎ নদীর ভিতরেই একটা ছায়া দেখা যায়। ছায়াটা এবার জলকণার মতো ঘুরছে চারপাশে। অসীমের দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে দরজাটাকে জোরে ধাক্কা দেয়, আর এক মুহূর্তে তা খুলে যায়।
ভেতরে ঢুকে সে দেখে—একটি গুহার মতো জায়গা।
দেয়ালে অসংখ্য চিত্র আঁকা: অন্ধকারে জন্ম নেওয়া ছায়া, যারা মানুষদের স্মৃতি খেয়ে বেঁচে থাকে।গুহার এক কোণে বসে আছে এক বৃদ্ধ, চুলদাড়ি জট পাকানো। চোখ খোলার আগেই সে বলে ওঠে, “তুই এসেছিস শেষ প্রশ্নের জবাব পেতে?”
অসীম হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “আপনি কে?”
বৃদ্ধ বলল, “আমি সেই প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী, যে ছায়াদের দেখেছিল। তারা আলো থেকে জন্ম নেয়, কিন্তু অন্ধকারে বাস করে। সুবোধ সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু সে ভুল করেছিল—তুই যদি সেই ভুল না করতে চাস, তাহলে স্মৃতির দরজা খুলতে হবে।”
অসীম তখন বুঝতে পারে, ছায়ারা শুধু মানুষকে হারিয়ে দেয় না, তাদের স্মৃতি থেকেও মুছে ফেলে।
আর তখনই গুহার দেয়ালে সে দেখে সুবোধের ছবি—কিন্তু নিজেরটা দেখে না।
সে কি ভুলে যেতে বসেছে, সে কে?
---
চলবে…
পরবর্তী পর্বে: অসীম নিজেকে খুঁজবে—স্মৃতির সেই দরজা খুলে যাবে, যেখানে ছায়া আর আলো একসাথে থাকে… কিন্তু কোনো একপক্ষই সত্য নয়।
---
*নয়ন তারা*
Comments
Post a Comment