ধারাবাহিক ছায়া শহর পর্ব ৩
ছায়া শহর – পর্ব ৩: সুবোধের ডায়েরি
বৃদ্ধার কথায় অসীম থমকে যায়। মনে পড়ে সুবোধের সেই হাসিমুখ, সেই সাহসী চোখের দৃষ্টি—যে সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি ছিল।
বৃদ্ধা তাকে নিয়ে যায় বাড়ির পিছনের এক ছোট্ট ঘরে। সেখানে ধুলো জমে থাকা একটা পুরনো টেবিলের ড্রয়ার খুলে সে বের করে একটি চামড়ার বাঁধানো ডায়েরি। “এইটাই সুবোধের শেষ চিহ্ন,” বৃদ্ধা ফিসফিস করে বলে, “এখানে তার সব লেখা আছে… কিন্তু সাবধান, সব সত্য জানাও বিপজ্জনক।”
অসীম ডায়েরির প্রথম পাতাটা খুলে দেখে—তারিখ: ১২ মার্চ।
"আজ চর ভৈরবপুরে এসেছি। মনে হচ্ছে এই শহর যেন ধোঁয়ার মধ্যে ঢাকা। লোকজন চুপচাপ, কেউ কারো চোখে চোখ রাখে না। রাত হলে সবাই দরজা বন্ধ করে রাখে। কেউ বলে না, কিন্তু সবাই ভয় পায়। এবং আমি জানি, ভয়টা একেবারে অমূলক নয়।"
অসীম দ্রুত পড়তে থাকে—
"১৪ মার্চ: আজ রাতে প্রথম ছায়াটা দেখলাম। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, স্পষ্ট একটা অবয়ব, কিন্তু মুখহীন। ওর সামনে দাঁড়ানো একজন লোক ছিল, আর ঠিক এক মুহূর্তে সে যেন মাটি গিলে নিল তাকে। কেউ চিৎকার করল না, কেউ দৌড়াল না—সবাই জানালার পর্দা টেনে দিল। এখানকার মানুষ ছায়াদের দেখে না, কারণ তারা জানে দেখলে কেউ আর ফিরেও আসে না।"
অসীমের কাঁধে হঠাৎই কেউ হাত রাখল। চমকে উঠে সে তাকায়—বৃদ্ধা।
“আর পড়ো না এখন, রাতে ছায়ারা জেগে ওঠে,” সে বলল।
কিন্তু অসীম জানে, দেরি করার সুযোগ নেই। ডায়েরির শেষে একটা নাম—“রিভার হাউজ, পশ্চিম প্রান্ত”—ঘন কালিতে আঁকা, নিচে লেখা: "ওখানেই সব শুরু, আর ওখানেই শেষ।"
---
চলবে…
পরবর্তী পর্বে: অসীম পৌঁছে যাবে রিভার হাউজে—যেখানে এক পুরনো ছবি খুলে দেবে ছায়া শহরের ইতিহাস, এবং তার সাথে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
---
*নয়ন তারা*
Comments
Post a Comment