জঙ্গলের বন্ধু

--- গল্পের নাম: জঙ্গলের বন্ধু  


 অনেক বছর আগের কথা। এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম ছিল আরনব। বয়স মাত্র আট। তার মা-বাবা এক পাহাড়ি ভ্রমণে গিয়েছিল এবং হঠাৎ এক ঝড়ের রাতে স্রোতে ভেসে গিয়ে সে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরদিন সে চোখ খুলে দেখে, সে এক অজানা গভীর জঙ্গলের মধ্যে পড়ে আছে। চারদিকে অজানা গাছ, নানা শব্দ আর এক ধরনের নিস্তব্ধ ভয়। প্রথমে সে কাঁদতে শুরু করল। না ছিল খাবার, না ছিল পানি, না কোনো মানুষ। হঠাৎ সে দেখতে পেল এক বানর গাছ থেকে তাকে দেখছে। বানরটা নিচে নেমে এল, হাতে কিছু পাকা কলা। আরনব ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। কিন্তু বানরটি তার সামনে কলাগুলো রেখে চলে গেল। ক্ষুধার্ত আরনব ধীরে ধীরে সেই কলা খেয়ে শক্তি ফিরে পেল। পরদিন সে আবার জঙ্গলে হাঁটতে থাকে। তখনই তার দেখা হয় এক বিশাল বুড়ো হাতি, নাম ছিল বাপন। হাতিটি তার শুঁড় দিয়ে আরনবকে মাথায় তুলে নেয়, তারপর এক নদীর ধারে নিয়ে যায়। আরনব পানি খায়, হাতিকে জড়িয়ে ধরে। যেন এক নতুন বন্ধুত্বের শুরু। দিন যত যেতে থাকে, আরনব তত জঙ্গলের প্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে থাকে—এক বুদ্ধিমান পেঁচা তাকে রাতের দিক চেনাতে শেখায়, এক হরিণ তাকে ঝোপের খাবার চিনিয়ে দেয়, আর এক সাপও তার বন্ধু হয়ে যায়, কিন্তু বলে দেয় কোন গাছের ফল বিষাক্ত। সে শিখে যায় গাছের ছাল দিয়ে কাপড় বানানো, মধু খুঁজে বের করা, এমনকি পশুপাখিদের ভাষাও একটু একটু করে বোঝে। বিপদের দিন একদিন হঠাৎ বজ্রপাত আর বিদ্যুৎ ছড়িয়ে এক অংশে আগুন ধরে যায়। পশুপাখিরা ভয় পেয়ে এদিক-সেদিক ছুটোছুটি শুরু করে। সেই সময় আরনব সকলকে শান্ত করতে থাকে। সে বাপন হাতিকে ডাকে, যারা শুঁড় দিয়ে নদী থেকে পানি আনে। বানররা ওপর থেকে শুকনো ডাল ফেলে আগুনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে গিয়ে অন্য পশুদের সতর্ক করে। আরনব নিজেও ছুটে ছুটে ছোট ছোট আগুন নিভাতে থাকে। অবশেষে আগুন নিভে যায়। সেদিন পুরো জঙ্গল বোঝে—এই ছেলে শুধু মানুষ নয়, সে তাদের পরিবারের একজন। সবাই তাকে ঘিরে ধরে, আনন্দ করে। আরনব আর কখনো জঙ্গল ছাড়ে না। সে পশুপাখিদের দেখভাল করে, আহতদের সেবা করে, আর অন্য কোনো পথভ্রান্ত মানুষ এলে তাকে পথ দেখায়। এইভাবেই আরনব হয়ে ওঠে ‘জঙ্গলের বন্ধু’। তার গল্প আজও পাখিরা ডাকে বলে, নদী গেয়ে ওঠে আর গাছেরা বাতাসে দুলে বলে— একটা ছেলে ছিল, যে মানুষ ছিল, তবু আমাদেরই মতো হয়ে উঠেছিল। শেষ। ---




 *নয়ন তারা*

Comments

Popular posts from this blog

প্রাক্তন স্যারের শ্রেণিকক্ষ

ছায়া থেকে আলো

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা