ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা
গল্প: "ডিএর আশায়...
"
সালটা ১৯৮৫। চন্দ্রকোনার এক ছোট্ট গ্রামে, নাম তার খোকন স্যার। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীরা তাকে ভালোবেসে “খোকন মাস্টার” বলে ডাকত। জীবন কেটেছে অল্পে-সরলতায়, নিখুঁতভাবে ক্লাস নেওয়া, প্রতিদিন স্কুলের ঘণ্টা বাজানোর আগে স্কুলে পৌঁছানো, আর ছুটির পরে ছাত্রদের নিয়ে গল্প করে সময় কাটানো—এই ছিল তার নিয়মিত রুটিন।
সময়ের সাথে সাথে সব কিছু পাল্টে গেল। সরকারি ঘোষণা এল—শিক্ষকদের জন্য ডিএ (ডিয়ারনেস এলাউন্স) দেওয়া হবে, যাতে তারা বাজারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। খোকন স্যার শুনে খুশি হলেন। মন বলল, “অবসর নেওয়ার আগে যদি এই টাকাটা পাই, কিছু টাকা জমিয়ে একটা ঘর বানাব, আর নাতিদের জন্য ছোট একটা খাতা-পেন্সিলের দোকান দিব।”
বছর গেল, ডিএর ঘোষণা এল, কিন্তু বাস্তবায়ন হলো না। একেকবার ফাইল গেল সদর দফতরে, ফিরল নীরবে। সহকর্মীরা বলল, “স্যার, এই তো হলো বলে, আর মাস দুয়েক!” খোকন স্যারও আশায় বুক বাঁধলেন, হিসেব করলেন কাগজে—“এই টাকাটা এলে আমি একটা সাইকেল কিনব, এতদিন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।”
সময় চলে গেল। ২০০৫ সালে অবসর নিলেন। শেষ ক্লাসে ছাত্ররা ফুল দিয়ে বিদায় দিল, চোখে জল নিয়ে বলল, “স্যার, আপনি আমাদের জীবনের আদর্শ!” কিন্তু খোকন স্যারের চোখে তখন অন্য জল—ডিএর না পাওয়া অভিমান, অবহেলার দীর্ঘশ্বাস।
অবসরের পরে খোকন স্যার মাঝে মাঝে প্রাক্তন ছাত্রদের দেখে বলেন, “শুনিস, সেই ডিএটা আজও পাইনি... তবে তোদের ভালোবাসা পেয়েছি, সেটাই আমার আসল সম্মান।”
শেষ বয়সে ভাঙা চশমার ফ্রেমে তার দৃষ্টি ঝাপসা, কিন্তু মনের আয়নায় প্রতিটি ছাত্রের মুখ আজও স্পষ্ট। ডিএ না পেলেও, মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে খোকন স্যার রয়ে গেলেন স্মৃতির পাতায় অমলিন।
শেষ কথাঃ
সব শিক্ষকই হয়তো বেতন বা ভাতার আশায় থাকেন, কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় পাওনা—ছাত্রদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা, সেটা কোনো সরকারি আদেশ ছাড়াই চিরকাল থেকে যায়।
*নয়ন তারা*
Comments
Post a Comment