নারী নিরাপত্তা ও রাজনীতি

📘 গল্পের নাম: "সেদিন বাসে ওঠা হয়নি মেয়েটার" ---



 (১) ভোর পাঁচটা। কলকাতা স্টেশন। একটা অন্ধকার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে এক তরুণী, নাম তিথি। পরনে হলুদ সালোয়ার, হাতে একটা পুরনো ব্যাগ। সে চাকরির খোঁজে বর্ধমান থেকে এসেছে—একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ইন্টারভিউ আছে। মা বলেছিল, “ফিরে এস মা, শহরে মানুষ ভালো না।” কিন্তু সংসারের অভাব কি শহরের ভয় বোঝে? তিথির পাশেই দাঁড়িয়ে আরেকজন তরুণ—নাম রুদ্র। চোখে চশমা, কিন্তু চোখদুটো ভীষণ সজাগ। সে লক্ষ্য করে, মেয়েটা একটু অসহায়, কিন্তু মুখে সাহস। বাসে ওঠার সময় তিথি আচমকা বলে উঠল, “ভাই, আপনি একটু পাশে বসবেন? আমি বাইরে থেকে আসছি... একটু ভয় করছে।” রুদ্র মাথা নেড়ে বলল, “চলুন।” এই সাধারণ কথায় যে একটা ঝড় শুরু হবে, কেউ জানত না। --- 


 (২) বাস ছাড়ল। তিথির গন্তব্য ছিল সেক্টর ফাইভ। রুদ্রও যাচ্ছিল অফিসে। কথায় কথায় জানা গেল দু’জনের জীবনের কষ্ট—বেকারত্ব, অভাব, কিন্তু দুজনেই লড়ে যাচ্ছে। তিথি জানাল, বাবার মৃত্যু আর ভাইয়ের স্কুল ফি নিয়ে তার চিন্তা। রুদ্র বলল, “সাহস রাখুন, আপনি পারবেন।” সেই একটা বাক্য তিথির মনে গেঁথে গেল। বাস যখন এজেন্সি মোড় পার হচ্ছিল, হঠাৎ তিনজন উঠল বাসে। গায়ে রাজনৈতিক দলের স্টিকার, চোখে রাগ, মুখে উচ্ছৃঙ্খলতা। তারা চেঁচিয়ে বলল, “এই মেয়েটা আমাদের এলাকায় রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে। ধর ওকে।” ---


 (৩) বাস থেমে গেল। কন্ডাক্টর কিছু বলতে পারল না। তিথি চিৎকার করল, “আমি তো কিছু করিনি! আমার পরীক্ষা আছে!” লোকগুলো তিথিকে টানতে লাগল। রুদ্র বাধা দিতে গিয়ে এক ঘুষি খেল। বাসের লোকজন কেউ ভিডিও করছিল, কেউ সরে দাঁড়াচ্ছিল। কেউ কেউ ফেসবুক লাইভে, কেউ কানে ফোনে। কিন্তু কেউ তিথিকে বাঁচায়নি। একসময় তিথিকে বাস থেকে নামিয়ে নেওয়া হল জোর করে। রুদ্র তাড়া করল, কিন্তু তার আগেই তারা একটা গাড়িতে চেপে তিথিকে তুলে নিল। --- 


(৪) সেইদিন সন্ধ্যায়, ফেসবুকে লাইভে দেখা গেল একটি মেয়ে কাঁদছে। ভিডিওর নিচে লেখা: “চাকরির দিনে তুলে নেওয়া হল—সাহায্য করবে কেউ?” কিছু মানুষ শেয়ার করল, কিছু বলল—"নাটক হবে", কেউ লিখল—"নির্বাচনের আগে এসবই দেখা যায়।" রুদ্র থানায় গেল, মিডিয়াকে জানাল। কিন্তু পুলিশ বলল—“কেস নিতে গেলে রাজনৈতিক অনুমতি চাই।” রুদ্র তখন নিজের ফেসবুকে লিখল— > “যে সমাজ বাসে দাঁড়িয়ে ভিডিও করে, কিন্তু সাহায্য করে না, সে সমাজই ধর্ষণের যোগ্যতা রাখে।” ---



(৫) পরদিন সকাল। খবর এলো—তিথি একটি রেললাইনের ধারে পড়ে আছে, জ্ঞান হারিয়ে। আশেপাশের লোকজন বলল—রাতে একটা গাড়ি এসেছিল। কেউ জানে না কী ঘটেছে। তিথি বেঁচে ছিল। তবে তার মুখে ভয়, শরীরে আঘাত, আর চোখে ঘৃণা। রুদ্র ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে কিছুই নেই। ---



(৬) রুদ্র এবার পাগলের মতো পোস্ট করতে লাগল। “#JusticeForTithi” ট্রেন্ড করতে লাগল সোশ্যালে। মানুষ শেয়ার করল, কমেন্ট করল, ভিডিও ভাইরাল হলো। একটি নামী নিউজ চ্যানেল খবর করল—“বাসে তুলে নেওয়া হল মেয়েটি, প্রশাসন চুপ কেন?” হঠাৎ বিষয়টা ভাইরাল হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তদন্তের আদেশ এলো, তিথির নাম উঠে এল জাতীয় সংবাদে। --- 



 (৭) কিন্তু এরপর আরও কিছু বেরিয়ে এলো। তিথি যাকে রাজনৈতিক গুন্ডা বলেছিল, সেই ব্যক্তি একটি দলের যুবনেতা। তার ছবি উঠে এলো প্রাক্তন মন্ত্রীর সাথে। এবার থানা, পুলিশ, সবাই নড়েচড়ে বসল। তিথিকে নিরাপত্তা দেওয়া হলো। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলো। কিন্তু রুদ্র জানত, এই ঘটনার বিচার শুধু গ্রেফতার নয়—এই সমাজকে ধাক্কা দেওয়া দরকার। ---


 (৮) তিথি সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু সে জানায়, “আমি আর চাকরির জন্য যাব না। আমি অন্য মেয়েদের জন্য লড়ব।” সে একটি NGO গড়ে তোলে—“সেদিন বাসে ওঠা হয়নি মেয়েটার।” উদ্দেশ্য—বাসে, রাস্তায়, চাকরির পথে কোনো মেয়েকে আর একা না ফেলা হয়। রুদ্র পাশে দাঁড়ায়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে সেই মুভমেন্ট। ---


 (৯) একদিন এক নতুন মেয়ে চাকরির খোঁজে আসে কলকাতায়। সে যখন বাসে উঠতে ভয় পাচ্ছিল, হঠাৎ এক মেয়ের গলা শুনল—“ভয় পেও না, আমরা পাশে আছি।” তিথি দাঁড়িয়ে, পাশে রুদ্র। আর বাসে বসা অনেক মেয়েই জানে—এই সমাজ বদলাচ্ছে।
--- 



 ✅ গল্পটি ভালো লাগলে নিচে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।  


 *নয়ন তারা* ---

Comments

Popular posts from this blog

প্রাক্তন স্যারের শ্রেণিকক্ষ

ছায়া থেকে আলো

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা