অতীতের পত্র

গল্পের নাম: “অতীতের পত্র”  





 (১ম ব্লক: সূচনা)


 শান্তিনিকেতনের নির্জন একটি কোণে দাঁড়িয়ে ছিল এক পুরনো লাল ইঁটের বাংলো। জায়গাটার নাম ছিল "চিত্রা নীড়"। কেয়া নামের এক তরুণী, সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কলকাতা থেকে এখানে এসেছিল, শান্তির খোঁজে। কিন্তু সে জানত না, এই শান্তিনিকেতনে তার জীবন বদলে যাবে চিরতরে।  


 (২য় ব্লক: পাণ্ডুলিপির আবিষ্কার) 


প্রথম দিন বিকেলে সে যখন পুরনো বইপত্র গোছাচ্ছিল, একটা কাঠের বাক্সে আবিষ্কার করল হলুদ হয়ে যাওয়া কিছু চিঠি। প্রেরক: "অরিন্দম", প্রাপক: "মীরা"। চিঠিগুলোতে ভালোবাসা, বেদনা, প্রতীক্ষা—সবকিছু যেন প্রাণ পেত কাগজে কাগজে। এক জায়গায় লেখা ছিল: "তুমি না এলে এই জীবন এক শূন্য বাক্য হয়ে থাকবে, মীরা। তোমার অপেক্ষায় আমি প্রতিটি পূর্ণিমায় এই জানালায় বসে থাকি…"  


 (৩য় ব্লক: অরিন্দম কে? মীরা কে?)


 চিঠিগুলো পড়তে পড়তে কেয়া যেন হারিয়ে গেল অন্য এক জগতে। সে ঠিক করল, এই চিঠিগুলোর রহস্য খুঁজে বের করবেই। স্থানীয় এক বৃদ্ধ, নাম ‘রঘুনাথ কাকা’, তাকে বলল, “এই বাংলো একসময় কবি অরিন্দম সেনের ছিল। প্রেমে পড়েছিলেন তাঁর ছাত্রীর সঙ্গে, মীরা নাম ছিল মেয়েটির। কিন্তু সে প্রেম পরিণতি পায়নি।”

 (৪র্থ ব্লক: পূর্বজন্মের ছায়া) 


কেয়া ধীরে ধীরে অনুভব করছিল কিছু অদ্ভুত ব্যাপার। রাতে জানালার পাশে বসে ভেসে আসত এক সুরেলা গান, এক নারীকণ্ঠ—যেন এক আক্ষেপমাখা সুর। একদিন সে আয়নার দিকে তাকিয়ে যেন নিজেকে দেখতে পেল না, বরং এক শাড়িপরা মেয়েকে—চোখে জল, হাতে সেই চিঠি…  

 (৫ম ব্লক: কেয়া কি মীরার পুনর্জন্ম?) 


অদ্ভুতভাবে কেয়া অনুভব করতে লাগল, সে এই চিঠিগুলো আগে পড়েছে… এই ঘর, এই জানালা, সব যেন তার চেনা। স্থানীয় লাইব্রেরিতে গিয়ে সে খুঁজে পেল মীরার একটা পুরনো স্কেচ—যা দেখতে অবিকল তার মতোই!  

 (৬ষ্ঠ ব্লক: পুনর্মিলনের সংকেত) 

এক পূর্ণিমার রাতে, কেয়া সেই জানালার পাশে বসে যখন একটি চিঠি পাঠ করছিল, আচমকা বাতাসে এক চিঠি ভেসে এসে তার কোলে পড়ল। এতে লেখা ছিল: "আমি ফিরব, মীরা। শত জন্মের পরেও যদি লাগে, আমি তোমার কাছে ফিরব…" কেয়া চোখ তুলে জানালার বাইরে দেখল—এক অপরিচিত যুবক দাঁড়িয়ে। তার চোখে ছিল সেই একই গভীরতা, যা চিঠির অক্ষরে অরিন্দম ফুটিয়ে তুলত।  

 (৭ম ব্লক: আত্মার পুনর্জন্ম) 

ছেলেটির নাম ছিল "অর্ণব", একজন কবি, যিনি শহরের কোলাহল ছেড়ে শান্তিনিকেতনে এসেছেন নিজের লেখা নিয়ে গবেষণা করতে। কেয়া অবাক হয়ে দেখে, অর্ণবের কবিতার খাতায় হুবহু সেইসব লাইন, যা অরিন্দমের চিঠিতে ছিল!  


 (৮ম ব্লক: মিলনের ছন্দ)

 দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত যোগসূত্র তৈরি হয়। কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন ছিল না—দৃষ্টিতে, শব্দে, নিঃশ্বাসে তারা একে অপরকে চিনে নেয়। কেয়া বুঝে ফেলে, এই অরিন্দমই আবার জন্ম নিয়েছে, ফিরে এসেছে তার কাছে—এক অসমাপ্ত প্রেমের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।  

 (৯ম ব্লক: শেষ পত্র) 


কেয়া লিখে ফেলে একটি শেষ চিঠি—"অরিন্দম, এই জন্মে যেন আমাদের গল্পটা অসমাপ্ত না থাকে। আমরা যেন আবার চিত্রা নীড়ে এক নতুন গল্প লিখি, এই ইঁটের ভেতর, শব্দের ছায়ায়।" সেই চিঠি সে রেখে দেয় কাঠের বাক্সে। এবং জানালার পাশে বসে, দুজন হাতে হাত ধরে দেখে এক পূর্ণিমার চাঁদ—যার আলোয় লেখা হয়ে যায় এক প্রেমের পূর্ণগাথা। --- 


 গল্পের সারাংশ ও থিম: 


 এই গল্পটি প্রেম, আত্মত্যাগ ও পুনর্জন্মের এক সূক্ষ্ম কাহিনি। অতীতের ভালোবাসা কীভাবে বর্তমানকে ছুঁয়ে যায়, এবং দু’টি আত্মা কীভাবে বারবার একে অপরকে খুঁজে নেয়—তাই এই গল্পের মূল উপজীব্য।
---






 *নয়ন তারা*

Comments

Popular posts from this blog

প্রাক্তন স্যারের শ্রেণিকক্ষ

ছায়া থেকে আলো

ডি এ পাওয়ার অপেক্ষা